আমাদের সারা রাজ্য তথা সারা দেশ জুড়ে এমন বহু দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী কিশোর কিশোরীরা রয়েছে যারা নিজেদের শারীরিক অক্ষমতার কারণে এবং পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে লেখাপড়া শিখতে পারে না। ফলে তাদের সারাটা জীবন অশিক্ষার অন্ধকারেই কেটে যায়। সারা জীবন ধরে তাদেরকে পরনির্ভরশীল হয়েই কাটিয়ে দিতে হয়। তারা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারেন না। আর সেই কারণে এই সব প্রতিবন্ধী কিশোর কিশোরীরাও যাতে লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাই বহু বছর আগেই আমাদের দেশের সরকার সর্বশিক্ষা অভিযান মিশন শুরু করে এই সব শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী কিশোর কিশোরীদের সার্বিক সাক্ষরতা দানের উদ্দেশ্যে সারা দেশ জুড়ে শ্রবণ ও বাক শক্তি বিহীন প্রতিবন্ধী কিশোর কিশোরীদের জন্য বহু বিদ্যালয় গড়ে তুলেছে। যে বিদ্যালয় গুলিতে এই ধরনের শ্রবন ও বাক শক্তি বিহীন ছেলে মেয়েদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষাদান করা হয়। এখানে শুধুমাত্র বিনামূল্যে শিক্ষাদান করা ছাড়াও বিনামূল্যে ছাত্র ছাত্রীদের থাকা খাওয়া ও দেখাশোনা করার ব্যাবস্থাও করেছে সরকার। কিন্তু শুধুমাত্র এই সব ব্যাবস্থা গুলো থাকলেই তো আর হবে না। একটা স্কুল চালানোর জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন হল পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। কিন্তু বর্তমানে আমাদের রাজ্যের প্রতিবন্ধী স্কুল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অশিক্ষক কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে যার ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর সেই কারণেই যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করার জন্য রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে সারা রাজ্য জুড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিবন্ধী স্কুল গুলিতে ন্যুনতম অষ্টম শ্রেণী পাসে বেশ কিছু সংখ্যক অশিক্ষিক কর্মী নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্যের যে কোনো জেলা থেকে সকল ন্যুনতম অষ্টম শ্রেণী পাস বেকার চাকরিপ্রার্থীরা এখানে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল এইটাই যে এখানে চাকরির জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো রকম লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে না । শুধুমাত্র ইন্টারভিউ ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই এখানে কর্মী নিয়োগ করা হবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
শূন্যপদ গুলির নাম:-
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে সর্বশিক্ষা অভিযান মিশনের অন্তর্গত রাজ্যের প্রতিবন্ধী স্কুল গুলিতে ম্যাট্রন ও দারোয়ান পদে কর্মী নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসীমা ও বেতনের পরিমাণ:-
উপরিউক্ত শূন্যপদ দুটিতে চাকরির জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে যে পদের জন্য যে ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার সেগুলি হল-
দারোয়ান-
এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনো সরকারি স্কুল থেকে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাস করে থাকতে হবে। সেইসঙ্গে কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১/০১/২০২৩ অনুযায়ী ৪০ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রতি মাসে ১৭,০০০-৪৩,৬০০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।
ম্যাট্রন-
এই পদের জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনো সরকার স্বীকৃত বোর্ড থেকে কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকতে হবে। সেইসঙ্গে কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১/০১/২০২৩ অনুযায়ী ৪০ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রতি মাসে ১৯,৭০০-৫০,৫০০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।
আবেদন করার নিয়মাবলী:-
সর্বশিক্ষা অভিযান মিশনের অন্তর্গত রাজ্যের প্রতিবন্ধী স্কুল গুলিতে দারোয়ান ও ম্যাট্রন পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীদের অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এবং তার জন্য যা যা করতে হবে সেগুলি হল-
১) সবার প্রথমে এই বিজ্ঞপ্তির নীচে দেওয়া অফিসিয়াল নোটিফিকেশন লিঙ্কে ক্লিক করে নোটিফিকেশন টিকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।
২) এরপর এই নোটিফিকেশনের ৩-৪ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি অ্যাপ্লিকেশান ফরম্যাট দেখতে পাবেন সাদা A4 সাইজ পেপারে এর একটি প্রিন্ট আউট বের করে নিন।
৩) এরপর সেই ফর্মে আপনার নিজের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, অভিভাবকের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেন্ডার, বয়স, একটি বৈধ ইমেল আইডি ও ফোন নাম্বার ইত্যাদি লিখতে হবে।
৪) এবং তিনি আগে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা সহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে হবে। তিনি সেখানে কোন পদে কাজ করতেন, কত টাকা বেতন পেতেন, কবে সেই পদ থেকে অবসর নিয়েছেন সেই সবকিছু লিখে ফর্ম টিকে ফিলাপ করে ফেলতে হবে।
৫) এরপর ফর্মের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো লাগিয়ে দিন এবং সিগনেচারের জায়গায় সিগনেচার করে দিন।
৬) এরপর আপনার যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্টস সহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলির এক কপি করে জেরক্স বের করে নিয়ে সেগুলিকে সেলফ অ্যাটেস্টেড করে ফেলুন।
৭) সবশেষে এই সবকিছু একসাথে করে একটি খামে ভরে খামের উপর ঠিকানা লিখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্পীড পোস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:-
আবেদন পত্র জমা দেওয়ার সময় আবেদন পত্রের সঙ্গে যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি যুক্ত করে জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা বার্থ সার্টিফিকেট এর এক কপি জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
২) ফটো আইডি প্রুফ হিসেবে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড এর এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৩) দারোয়ান পদের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণী পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট এর এক কপি করে জেরক্স এবং ম্যাট্রন পদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাসের পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট এর এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৪) দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৫) ওয়ার্ক এক্সপিরিয়েন্স সার্টিফিকেট এর জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি:-
এখানে চাকরির জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের কোনো লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে না। আবেদন পত্র জমা পড়ার পর তাদের সরাসরি একটি ৫০ নম্বরের ইন্টারভিউ ও কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ডাকা হবে। এই বিষয় গুলিতে যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে বাছাই করে জয়েনিং লেটার পাঠিয়ে চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।
আবেদন পত্র পাঠানোর শেষ তারিখ ও ঠিকানা:-
এখানে চাকরির জন্য আবেদন পত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১৬/০১/২০২৩ পর্যন্ত। তাই এতো কম যোগ্যতায় এতো উচ্চবেতনের সরকারি চাকরি পাওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া না করে যত শীঘ্র সম্ভব নিম্নলিখিত ঠিকানায় আবেদন পত্র জমা করে ফেলুন। ঠিকানাটি হল-
To,
The Member Secretary
Pippa Residential Deaf
and Dumb School
C/o, Office Of The District
Mass Education Extension
Officer, Education Complex
Atul Market, PO+Dist-Malda
Pin- 732101