আমাদের দেশে এমন অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী আছে যাদের উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর কোনো মেডিকেল কোর্স করে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের আর্থিক অসংগতির কারণে তা করে উঠতে পারেন না। ফলে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলে নিজের পরিবারের মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায় সারাটা জীবন। আর সেই কারণেই প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের ন্যাশানাল স্কলারশিপ অর্থাৎ জাতীয় বৃত্তি প্রদান করা হয়। তবে এ ব্যাপারে আমাদের রাজ্য সরকারের অবদান ও কিন্তু কিছু কম নেই। আমাদের রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকেও রাজ্যের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর একাধিক স্কলারশিপ দেওয়া হয় যেমন- স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ, মাইনোরিটি স্কলারশিপ, উত্তরকন্না স্কলারশিপ সহ আরও অনেক। যাতে অর্থের অভাবে যে সব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্বপ্ন পূরণ হয় না এই স্কলারশিপের মাধ্যমে যাতে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
তবে শুধু রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার ই নয় এই বিষয়ে বেশ কিছু দেশি ও বিদেশি প্রাইভেট কোম্পানির অবদানও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলো আদিত্য বিড়লা স্কলারশিপ যার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের বার্ষিক ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা করে স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। আর এই স্কলারশিপ লাভ করে আমাদের দেশের বহু দরিদ্র মেধাবী ছাত্র ছাত্রী ইতিমধ্যেই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা লাভ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আর আজ আমরা এমনই এক বিখ্যাত কোম্পানির প্রদান করা স্কলারশিপের বিষয়ে আলোচনা করব।
আজ আমরা যে কোম্পানির দেওয়া স্কলারশিপের বিষয়ে কথা বলব তার নাম হল Phillips। Phillips হল চিনের একটি বিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। মূলত চিনে এই কোম্পানি গড়ে উঠলেও আমাদের সারা দেশ জুড়ে এই কোম্পানির একাধিক শাখা গড়ে উঠেছে। সারা বিশ্ব জুড়ে এই কোম্পানিতে তৈরি হওয়া প্রোডাক্টের চাহিদা খুব বেশী। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই কোম্পানির বার্ষিক আয়ের পরিমাণও প্রচুর। আর তাই সম্প্রতি এই কোম্পানির তরফে আমাদের দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই স্কলারশিপের বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
স্কলারশিপের বিবরণ:-
চিনের বিখ্যাত কোম্পানি Phillips এর তরফ থেকে ভারতের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ৫০,০০০ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া শুরু করা হয়েছে।
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:-
Phillips কোম্পানির তরফ থেকে এই স্কলারশিপ লাভ করার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারী পড়ুয়াদের যা যা যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলি হল-
১) আবেদনকারী পড়ুয়াকে অন্তত পক্ষে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে থাকতে হবে।
২) আবেদনকারীকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর যে কোনো মেডিকেল ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কিত কোর্স যেমন- MBBS/BDS/Nursing(B.Sc/GNM)/B.Pharm, BAMS ইত্যাদি তে Admission নিয়ে থাকতে হবে।
৩) আবেদনকারী পড়ুয়ার পরিবারের বার্ষিক আয় ৬ লক্ষ টাকার নীচে হতে হবে।
৪) আবেদনকারী পড়ুয়ার নিজের নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি:-
এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক ছাত্র ছাত্রীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তার জন্য যা যা ধাপ অনুসরন করতে হবে সেগুলি হল-
১) প্রথমে www.buddy4study.com এ প্রবেশ করতে হবে।
২) তারপর সেখানে Registration option এ ক্লিক করতে হবে।
৩) তারপর নিজের নাম, অভিভাবকের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেন্ডার, বয়স, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, আধার নম্বর, একটি বৈধ ইমেল আইডি ও ফোন নাম্বার ইত্যাদি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন Complete করতে হবে।
৪) এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো, আবেদনকারীর নিজস্ব সিগনেচার ইত্যাদি স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:-
আবেদন করার সময় যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি যুক্ত করে জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট বা বার্থ সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
২) আধার কার্ড স্ক্যান করা।
৩) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
৪) পঞ্চায়েত প্রদত্ত ইনকাম সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
৫) এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো স্ক্যান করা।
৬) আবেদনকারীর নিজস্ব সিগনেচার স্ক্যান করা।
৭) আবেদনকারী যে মেডিকেল কোর্সে ভর্তি হয়েছেন সেই ভর্তির রসিদ স্ক্যান করা।
৮) ব্যাঙ্কের পাস বুকের প্রথম পাতা স্ক্যান করা।
নিয়োগ পদ্ধতি:-
Phillips স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদনকারী পড়ুয়াদের আবেদন পত্র জমা পড়ার পর তাদের উচ্চমাধ্যমিক পাসের নম্বরের ভিত্তিতে যাদের যোগ্য বলে মনে করা হবে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ট্রান্সফার করে দেওয়া হবে।
আবেদনের সময়সীমা:-
এই স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন পত্র জমা নেওয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তা চলবে আগামী ৩১ শেষ জানুয়ারি পর্যন্ত।