আপনি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী একজন বেকার চাকরিপ্রার্থী? দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে চাকরির জন্য চেষ্টা করে চলেছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি? তাই বেকারত্বের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন? এদিকে যে চাকরি না পেলে কোনো ভালো ব্যাবসা করেও নিজের একটা স্থায়ী ভবিষ্যত গড়ে তুলবেন তার জন্য যে পুঁজির প্রয়োজন তা না থাকার কারণে কোনো ব্যাবসাও করতে পারছেন না? আর কোনো ব্যাঙ্ক থেকেও যে ঋন নিয়ে ব্যাবসা করবেন তাতেও সুদের হার খুব বেশী হওয়ার কারনে এবং অন্যান্য আরও বেশ কিছু নিয়মের কারণে সেই উপায়ও অবলম্বন করতে পারছেন না? তাই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন? তাহলে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি একটু মন দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারন এখানেই রয়েছে আপনাদের মুশকিল আসান। আজ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে চালু করা এমন এক প্রকল্পের খবর নিয়ে হাজির হয়েছি যার আওতায় এসে আপনার কাছে ব্যাবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকা সত্ত্বেও আপনি ব্যাবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একটা স্থায়ী ভবিষ্যত গড়ে তোলার আশা খুব সহজেই পূরণ করতে সক্ষম হবেন।
আজ আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে চালু হওয়া যে প্রকল্পের বিষয় আলোচনা করতে চলেছি তার নাম হল প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। এই প্রকল্প নতুন নয়। ২০১৫ সালে এই প্রকল্প চালু করেছিলেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওতায় এসে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়ের একটা বড়ো অংশ নিজেদের কর্মসংস্থানের দিশা খুঁজে পেয়েছেন। এই প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সেইসব বেকার যুবক যুবতীরা যাদের কাছে ব্যাবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো পুঁজি নেই তাদেরকে খুবই সামান্য পরিমাণ সুদের হারে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋন দেওয়া হয়। এবং সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাদেরকে ৩-৫ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। যেহেতু এই ঋন দান প্রকল্পটি বেশ কিছু বছর আগেই চালু হয়েছে তাই এই প্রকল্পের সাথে সবাই না হলেও আশা করি আপনারা অনেকেই পরিচিত। তবে যারা এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বিষয়ে তেমন ভাবে অবগত নন আজকের এই প্রতিবেদনটি বিশেষ ভাবে তাদের জন্য। নীচে এই প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য বুঝিয়ে বলা হল।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলি হল-
১) এই যোজনার মাধ্যমে খুবই অল্প সুদে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋন দেওয়া হয়।
২) এই যোজনার মাধ্যমে দেওয়া ঋন পরিশোধ করার জন্য গ্ৰাহককে ৩-৫ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
৩) এই যোজনার মাধ্যমে ঋন নিতে হলে কোনো গ্যারেন্টারের প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে কোনো গ্যারেন্টার ছাড়াই বেকার যুবক যুবতীদের ঋন প্রদান করা হয়।
৪) এই যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য কোনো রকম প্রসেসিং ফি দিতে হয় না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই তা করা যায়।
৫) এই যোজনার মাধ্যমে কেবলমাত্র এস.এম.ই, এম.এস.এম.ই, উৎপাদন, বানিজ্য ও সেবামূলক কাজের জন্য ঋণ প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার জন্য আবেদন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
এই যোজনার মাধ্যমে ঋন নিতে হলে আবেদনকারীর যে যে যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলি হল-
১) এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে।
২) এবং তাকে ভারতের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৩) এছাড়াও তাকে কেবলমাত্র এস.এম.ই, এম.এস.এম.ই, উৎপাদন, বানিজ্য ও সেবামূলক কাজ শুরু করার জন্যই এই যোজনার মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে তবেই তা গ্ৰাহ্য হবে নচেৎ নয়।
কি ধরনের ব্যাবসা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুদ্রা যোজনার সুবিধা পাওয়া যাবে?
সংশ্লিষ্ট যোজনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে যে ঋন প্রদান করা হবে তা বিশেষ কিছু ধরনের ব্যাবসা করার জন্য দেওয়া হবে। সব ধরনের ব্যাবসার জন্য এই ঋন প্রযোজ্য নয়। যে সব ব্যাবসা করার জন্য এই ঋন দেওয়া হবে সেগুলি হল- পোল্ট্রি শিল্প, মাছ চাষ, মৌমাছি প্রতিপালন, পশু প্রতিপালন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চাষবাস, ডেয়ারি শিল্প, জেরক্সের দোকান, ড্রাই ক্লিনিং এর দোকান, সেলাইয়ের দোকান, ঔষধের দোকান, সেলুন, জিম সেন্টার খোলা, বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যিক যানবাহন যেমন ট্রাক্টর, ট্রলি, অটো, রিক্সা, মোটর ভ্যান কেনা ইত্যাদির জন্য এই মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে কি পদ্ধতিতে ঋন দেওয়া হবে?
এই যোজনার মাধ্যমে তিন ধরনের ঋন দেওয়া হবে। আর সেগুলি হল- শিশু ঋন, কিশোর ঋন ও তরুণ ঋন।
শিশু ঋন-
কোনো বেকার যুবক/ যুবতী যদি নতুন ব্যাবসা শুরু করার জন্য এই যোজনার মাধ্যমে ঋন নিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে বার্ষিক ১০-১২% সুদের হারে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋন দেওয়া হবে। এবং তা পরিশোধ করার জন্য সময় দেওয়া হবে ৫ বছর।
কিশোর ঋন-
যদি এমনটা হয়ে থাকে যে কেউ ইতিমধ্যেই কোনো না কোনো ব্যাবসা করছেন কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ পুঁজির অভাবে তা এখনও পর্যন্ত সেভাবে উন্নতি লাভ করেনি তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে ব্যাবসার ক্রেডিট রেকর্ডের সাথে ব্যাবসার পরিকল্পনা মিলিয়ে ৫০,০০০- ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। এবং প্রদান করা ঋন অনুযায়ী সুদের হার যে ব্যাঙ্ক ঋন দেবে সেই ব্যাঙ্ক স্থির করবে।
তরুণ ঋন-
এর মাধ্যমে সেই সব ব্যাবসায়ীদের ঋন দেওয়া হবে যারা ইতিমধ্যেই ব্যাবসায় বেশ অনেকখানি উন্নতি লাভ করেছেন কিন্তু আরো উন্নতি করতে চাইছেন তাদেরকে। এর মাধ্যমে ৫-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋন দেওয়া হবে। এবং প্রদান করা ঋন অনুযায়ী সুদের হার যে ব্যাঙ্ক ঋন দেবে সেই ব্যাঙ্ক স্থির করবে।
মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে কোন কোন জায়গা থেকে ঋন পাওয়া যাবে?
এই যোজনার মাধ্যমে যে যে জায়গা থেকে ঋণ পাওয়া যাবে তা হল-
রাজ্য পরিচালিত সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে, পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক গুলি থেকে, বেসরকারি সেক্টর ব্যাঙ্ক গুলি থেকে, সমস্ত গ্ৰামীন ব্যাঙ্ক গুলি থেকে এই ঋন পাওয়া যাবে।
কিভাবে আবেদন করতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে ঋন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তার জন্য যা যা পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে সেগুলি হল-
১) প্রথমে google search box এ এই যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট Uday Mitra পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে।
২) তারপর সেখানে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
৩) রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের ফর্ম আসবে সেখানে প্রয়োজন মতো তথ্য দিয়ে ফর্মটিকে ফিলাপ করে ফেলতে হবে।
৪) এরপর যাবতীয় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সময় যে সব ডকুমেন্টস গুলি স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট করতে হবে সেগুলি হল-
১) আধার কার্ড।
২) প্যান কার্ড।
৩) ভোটার কার্ড।
৪) ইনকাম সার্টিফিকেট।
৫) ব্যাবসার বৈধ লাইসেন্স।
৬) এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
কিভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে?
আবেদন পত্র সহ যাবতীয় প্রমান পত্র জমা পড়ার পর সেগুলি খতিয়ে দেখে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তাদের এই ঋন দেওয়া হবে।
কতদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে ঋন নেওয়ার জন্য আবেদন করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। আবেদন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তা এখন চলছে। তাই শুভ কাজ ফেলে না রেখে যত শীঘ্র সম্ভব আবেদন করে ফেলুন আর সুনিশ্চিত ভবিষ্যত গড়ে তুলুন।