পশ্চিমবঙ্গের সকল বেকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এক বিরাট বড়ো নিয়োগের ঘোষণা করা হল। আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সারা রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলিতে ১০ হাজার শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। এই মোট ১০ হাজার শূন্যপদের মধ্যে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য দপ্তরেই ২৫০০ শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা হবে যেখানে মাধ্যমিক পাস করে থাকলেই রাজ্যের যে কোনো চাকরিপ্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগেই এই ১০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলতে চায় রাজ্য সরকার। এমনটাই সম্প্রতি এক রাজ্য প্রশাসনিক মন্ত্রীসভার বৈঠকে পাকাপাকিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চাকরির যা বাজার দিনে দিনে যেভাবে ক্রমশ বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত যে রাজ্যের প্রতিটি বেকার যুবক যুবতীর মুখে একরাশ খুশির হাসি ফোটাবে তা বলাই বাহুল্য।
করোনা মহামারী চলাকালীন দীর্ঘ ২ বছর সমগ্ৰ দেশ তথা সমগ্ৰ রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর গুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভাবে স্তব্ধ থাকার কারণে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের গ্ৰাফ যেভাবে ক্রমশ উর্ধ্বগামী হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের রাজ্য সরকার খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাই যত শীঘ্র সম্ভব এই ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের অবসান ঘটানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক কর্মমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু ওই যে কথায় বলেনা এক গামলা দুধে একটু খানি চোনা। আমাদের রাজ্য সরকারের অবস্থাও হয়েছে ঠিক তেমনই। এতো সব কিছু করার পরেও প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চলা দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আত্মসাৎ করা, একশো দিনের কাজ নিয়ে চলা দুর্নীতি, মিড ডে মিল প্রকল্পে দুর্নীতি এই ঘটনা গুলির জন্য একাধিক বার মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।
যদিও আমাদের রাজ্য সরকারও মোটেই মুখ বুজে সবকিছু মেনে নেয়নি। এইমাত্র কিছুদিন আগেই উত্তরবঙ্গের এক প্রশাসনিক সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশের এই ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দোষারোপ করেছেন আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে তিনি এও দাবি করেছেন যে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার কারণে দেশের অন্যান্য রাজ্য গুলিতে বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে সেখানে আমাদের রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে রাজ্যের বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ কমিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই যে মোট ১০ হাজার শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য দপ্তরেই ২৫০০ জন আশাকর্মী নিয়োগ করা হবে। যেখানে মাধ্যমিক পাস হলেই বেকার চাকরিপ্রার্থীরা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও এইমাত্র তিনদিন আগেই প্রাইমারী টেট ২০২২ এর যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সবকিছু নিয়ম মেনে সেই অনুযায়ী খুব শীঘ্রই প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগের কাজও সুসম্পন্ন করে ফেলবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এমনটাই জানিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। কিন্তু নিন্দুকের কাজই তো নিন্দা করা। তাই রাজ্যের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য রাজ্য সরকারের এইসব প্রচেষ্টাকে বিরোধী পক্ষের দলনেতারা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল সরকারের গদি পুনরায় টিকিয়ে রাখার নিছক এক ফাঁদ বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও রাজ্য সরকার সেই সব কথার পরোয়া না করেই নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী রাজ্যের বেকারত্ব দূরীকরণ করার জন্য প্রানপনে চেষ্টা করে চলেছেন। তবে এই ১০ হাজার শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের জন্য কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে এখন শুধু সেই সময়েরই অপেক্ষা।