এতদিন পর্যন্ত কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সাধারণ রাজ্য সরকারি কর্মী, স্কুল কলেজের শিক্ষক, পৌরসভা কর্মী, পুলিশ কর্মী, দমকল কর্মী এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু এই কিছু দিন হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ হাইকোর্টের ৫ সংগঠনের প্রায় ৩০০ জন স্থায়ী কর্মচারীও অন্যান্য সব আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে একত্র হয়ে তাদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে অর্থাৎ তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
২০১৬ সাল থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA আদায়ের জন্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ভাবে আন্দোলন করে চলেছেন। এমনকি তারা হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বারংবার মামলা মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। কিন্তু তাতেও আজ পর্যন্ত কোনো লাভ হলো না। রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মিটিয়ে দেওয়া তো দূর, উল্টে রাজ্য সরকার তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারি কর্মীদের হাইকোর্টে দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের নাকি কোনো DA বকেয়া নেই। তাদের সব পাওনা গন্ডা নাকি রাজ্য সরকার মিটিয়ে দিয়েছেন। এই কথা শোনা মাত্রই সকল রাজ্য সরকারি কর্মীরা অত্যন্ত ক্রদ্ধ হয়েছিলেন।
কিন্তু তাও তারা সেই ক্রোধ সংবরণ করে তাদের হাইকোর্টে করা মামলার ৩০ শে নভেম্বর ও সুপ্রিম কোর্টে করা মামলার ২ রা ডিসেম্বর যে ফাইনাল শুনানি হওয়ার কথা ছিল তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ যে সব দপ্তর গুলির বিভিন্ন শাখা অফিস আমাদের রাজ্যে গড়ে উঠেছে এবং রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় সেই সব দপ্তরের কর্মীদের প্রত্যেক বছর বছর এমনকি সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী এই অক্টোবর মাসেও তাদের প্রাপ্য DA সময় মতো দিয়ে দেওয়া দেখে রাজ্য সরকারি কর্মীরা আর নিজেদের ক্রোধ দমন করতে পারলেন না। তারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এবার এক তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন যে আগামী নতুন বছরের ২৭ শে জানুয়ারি তারা বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে সারা রাজ্য জুড়ে সমস্ত রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলিতে কর্মবিরতি পালন করবেন এছাড়াও ওই দিন তারা সারা কলকাতা শহর জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় বসে অনশন কর্মসূচি পালন করার ও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা এও জানিয়েছেন যে এইসব কিছু করার পরেও যদি রাজ্য সরকারের টনক না নড়ে অর্থাৎ সরকার যদি তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA তাদের মিটিয়ে না দেয় তাহলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য পেনডাউন করবেন।
তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২ রা ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের DA মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রায় অনুযায়ী সামান্য হলেও আশা করা যাচ্ছে যে আগামী নতুন বছরের ১ লা জানুয়ারি সকল রাজ্য সরকারি কর্মীদের সম্পূর্ণ পরিমাণে না হলেও অন্তত পক্ষে আগের বছরের ৩% এবং এই বছরের ৩% মোট ৬% DA রাজ্য সরকার তাদের মিটিয়ে দেবে। আর এই খবর DA আদায়ের জন্য মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের কানে পৌঁছতে তারা এখনকার মতো কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছেন।
কিন্তু তারা শান্ত হলে হবে কি অন্যদিকে আবার রাজ্যের সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে হাইকোর্টের হাতে সেই হাইকোর্টের মোট ৫ সংগঠনের প্রায় ৩০০ জন কর্মচারী তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অর্থাৎ বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে পুরো আদালত চত্বর জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এর ফলে হাইকোর্টে দায়ের করা সমস্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা, জমি সংক্রান্ত মামলা, সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সেখানকার পড়ুয়াদের করা মামলা সর্বপরি প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে করা মামলার ফাইনাল শুনানি পর্যন্ত এই হাইকোর্টের কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালনের জন্য আটকে রয়েছে। কারন আদালতের এইসব কর্মীদের কাজই হচ্ছে সমস্ত কেসের যাবতীয় ডিটেইলস কম্পিউটারে রেকর্ড করে রাখা, মামলার পরবর্তী শুনানি ও সেই সংক্রান্ত নির্দেশ গুলি নথীভুক্ত করে রাখা, কবে কোন মামলার শুনানি আছে সেই অনুযায়ী ডাক দেওয়া, এজলাসে বিচারপতি এলে তাকে মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় ফাইল পত্র এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করা এইসব। তাই এইসব কাজ যে কর্মীরা করেন তারাই যদি কর্মবিরতি পালন করেন তাহলে বিচারপতি ও উকিলেরা একা কি করে আদালতের সমস্ত আইনি কাজকর্ম পরিচালনা করবেন। তাই এমনটা হলে যে আদালতের যাবতীয় আইনি কাজকর্ম সম্পূর্ণ ভাবে আটকে থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তাই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য সরকার কবে তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA তাদের মিটিয়ে দেবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।