বকেয়া ডি.এ আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সুপ্রিম কোর্টে করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ই জানুয়ারি যে ফাইনাল শুনানি হওয়ার কথা ছিল সেখানে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পেশ করা সমস্ত হলফনামায় বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকার কারণে এই মামলার শুনানি বাতিল করে দেওয়া হয়। এবং তা টানা দু’মাস পিছিয়ে দিয়ে আগামী ১৫ ই মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ফলে ওই দিন ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে লক্ষ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মীর অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল। ফলত সেই দিনের সেই ঘটনায় রাজ্য সরকারি কর্মীরা এতটাই ক্রদ্ধ হয়েছেন যে তারা সেই ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে আগামী ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি তারা সেদিন কলকাতার রাস্তায় এক রেস্টুরেন্টের সামনে ধর্নায় বসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া ডি.এ আদায়ের উদ্দেশ্যে হাইকোর্টে করা মামলা থেকে সেভাবে কোনো সুবিচার না মেলায় রাজ্য সরকারি কর্মীরা বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেছিলেন গত ১৪ ই জানুয়ারি তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং দীনেশ মাহেশ্বরীর ডিভিশন বেঞ্চে যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তা বিশেষ কারণ বশত বাতিল হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল গত ১৬ ই জানুয়ারি। আর সেই ঘটনার জেরে সেই মূহুর্তেই রাজ্য সরকারি কর্মীরা অত্যন্ত ক্রদ্ধ ভাবে একথা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ১৬ ই জানুয়ারি ডি.এ মামলা নিয়ে যে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে তাতে যদি মামলার রায় তাদের পক্ষে যায় তাহলে ভালো কথা আর যদি তা না হয় তাহলে আগামী ২৭ শে জানুয়ারি তারা সারা রাজ্য জুড়ে সমস্ত রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলিতে কর্মবিরতি পালন করবেন। এছাড়াও ওই দিন তারা সারা কলকাতা শহর জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় বসে অনশন কর্মসূচি পালন করার ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তারা এও জানিয়েছিলেন যে এইসব কিছু করার পরেও যদি রাজ্য সরকারের টনক না নড়ে অর্থাৎ সরকার যদি তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA মিটিয়ে না দেন তাহলে এবারে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য পেনডাউন করবেন।
এতো কিছু বলার পরেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের মনে কোথাও একটা সুপ্ত বিশ্বাস ছিল যে ১৬ ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তার রায় হয়তো তাদের পক্ষেই যাবে। আর সেই কারণেই তারা এতদিন পর্যন্ত শান্ত হয়ে সবকিছু সহ্য করছিলেন। কিন্তু ১৬ ই জানুয়ারি ও যখন এই ডি.এ মামলার কোনো ফয়সালা হল না অর্থাৎ ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে তাদের অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল। তখন আর তারা শান্ত থাকতে পারলেন না। তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি তারা সেদিন কলকাতার রাস্তায় এক রেস্টুরেন্টের সামনে ধর্নায় বসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের এই বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্নায় বসার সিদ্ধান্তের কথা কলকাতা পুলিশকে জানিয়ে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে চাইলে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই তখন রাজ্য সরকারি কর্মীরা বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হন। এবং তাদের সমস্ত ক্ষোভের কথা শুনে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা রাজ্য সরকারি কর্মীদের মিছিল বের করা ও ধর্নায় বসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। তবে সেইসঙ্গে তিনি এও বলেছেন যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের যদি ধর্নায় বসতেই হয় তাহলে কোনো রেস্টুরেন্টের সামনে বসা চলবে না। তারা চাইলে কলকাতা শহিদ মিনারের সামনে ধর্নায় বসতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তাদেরকে প্রত্যেক দিন ওই স্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। মোটের উপর যা বোঝা যাচ্ছে আগামী ২৭ শে জানুয়ারি দিনটি রাজ্য সরকারের কাছে খুবই ভয়ঙ্কর একটি দিন হতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত এই ঘটনার জল কতদূর পর্যন্ত গড়ায় সেটাই দেখার বিষয়।