এবারে কি তাহলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডি.এ মেটাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তার স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করে দিতে হবে? কিছুদিন আগেই এক অনুষ্ঠান মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়া কালীন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এমনি এক আভাস পাওয়া গেছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। সেদিন ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন যে ৭০ টির ও বেশি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কোষাগারের হাল ইতিমধ্যেই বেশ শোচনীয়। আর এই চিন্তায় নাকি তার রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার দাখিল। তার উপর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যদি আবার সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল শুনানিতে দেওয়া রায় অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি মেনে নিয়ে বকেয়া ডি.এ মিটিয়ে দিতে হয় তাহলে মুখ্যমন্ত্রীকে হয়তো বাধ্য হয়ে রাজ্যের মা বোনেদের আর্থিক সুবিধা দানের জন্য চালু করা স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করে দিতে হবে।
বারবার বিরোধী পক্ষের দলনেতারা পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র শ্রেণীর জনগণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা লক্ষীর ভান্ডার, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড সহ বাকি সব জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প গুলিতে তার বাংলার মা বোনেদের, ছাত্র ছাত্রীদের হাতিয়ার বানিয়ে ভোট আদায় করার কৌশল বলে রটিয়ে বেড়ালেও মুখ্যমন্ত্রী তাদের সেই কথায় বিন্দুমাত্র কর্নপাত না করে এই প্রকল্প গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা ডি.এ মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছিলেন যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডি.এ মেটানো নিয়ে সরকার যে অবহেলা করছে তা নয়। আসলে আমাদের রাজ্যের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদেরকে আর্থিক সহায়তা দান করার জন্য রাজ্য সরকার বেশ কিছু জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প চালু করেছে। আর সেগুলি চালাতেই প্রতি বছর রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর সেই কারণেই রাজ্য সরকার তার অধীনস্থ কর্মীদের বকেয়া ডি.এ মিটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা কার্যকর করতে বারবার ব্যার্থ হচ্ছেন।
কিন্তু তার করা মন্তব্য অনুযায়ী যদি এইটাই সত্যি হয় যে এইসব প্রকল্প গুলি চালাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কোষাগার শূন্য হয়ে যাচ্ছে তাহলে মাসে মাসে বাংলার মা বোনেদের অ্যাকাউন্টে লক্ষীর ভান্ডারের টাকা ঢুকছে কেমন করে? তার বেলায় প্রতি মাসে এতো টাকা সরকার পাচ্ছে কোথা থেকে? এমনটাই মন্তব্য প্রকাশ করেছে রাজ্যের বিরোধী পক্ষ বিজেপি দলনেতারা অর্থাৎ গেরুয়া শিবির। রাজ্যের বিরোধী বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি তার সোস্যাল মিডিয়ায় করা এক পোষ্টে লিখেছেন আসল কথা হল রাজ্য সরকার দান খয়রাতি করতে করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ মেলা, কাল খেলা, পরশু দুর্গাপূজা এই সবেতে মোটা মোটা টাকা দান করে নাম কিনতে গিয়েই সরকার দিনকে দিন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর দুর্গা পূজার দরুন রাজ্যের পূজা কমিটি গুলিকে অনুদান দিতে মোট ২৫৮ কোটি টাকা করে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়।
আর এইসব করতে গিয়েই রাজ্যের কোষাগারের এমন হাল হয়েছে যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডি.এ মেটানো তো দূরে থাক সরকারি কর্মীদের ডিসেম্বর মাসের মাইনে সরকার জানুয়ারি মাসে ঠিকঠাক মতো দিতে পারবে কিনা সেই নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এরূপ মন্তব্য ও প্রকাশ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য পাঠানো টাকাও নাকি রাজ্য সরকার লক্ষীর ভান্ডারের খাতে খরচ করে ফেলেছে। সুতরাং সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের ভান্ডার এখন এতটাই শূন্য যে রাজ্য সরকারকে যদি সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডি.এ এই মুহূর্তে মেটাতে হয় তাহলে রাজ্য সরকারের একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে।
২০১৫ সাল থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের যে ডি.এ বকেয়া রয়েছে তা যদি সরকার তাদেরকে এতদিন ধরে কিছু কিছু করে মিটিয়ে দিত তাহলে সরকারের মাথা থেকে অনেকটাই বোঝা হালকা হয়ে যেত। কিন্তু সরকার তা করেনি। আগামী ১৬ ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে ডি.এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে শুনানি হওয়ার কথা আছে তাতে মামলার শুনানি রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে যাবে বলেই বিরোধী বিজেপি পক্ষের দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন। আর যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই এমনটা হয় তাহলে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত জমা হওয়া পুরো বকেয়া ডি.এ একবারে সরকারি কর্মীদের মেটাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তার স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষীর ভান্ডার যে বন্ধ করে দিতে হলেও হতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটাই দেখার বিষয়।