রাজ্যের আপামর জনগণের সুখ সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমাদের রাজ্য সরকার এর আগে বহু সরকারি প্রকল্প চালু করেছেন, যেমন- খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী, লক্ষীর ভান্ডার, সবুজ শ্রী, যুবশ্রী,কন্যাশ্রী ইত্যাদি।যার ফলে আমাদের দেশের বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এবারেও ওই একই রকম ভাবে রাজ্যের জনগণের সুখ সুবিধার কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার একটি অন্যতম প্রকল্প চালু করেছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন রাজ্যের আপামর জনসাধারণ তথা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষ ও তাদের পরিবার।
নতুন করে আবারো এই প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং যারা এখনো আবেদন করেন নি তাদের জন্য মূলত এই সুখবরটি। তবে আপনি হয়তো ভাবছেন কি এই প্রকল্প? কোন প্রকল্পে আপনি সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে 1 লক্ষ টাকারও বেশি পেয়ে যাবেন। তবে জানুন রাজ্য সরকারের নতুন এই প্রকল্প নাম হল – বাংলা আবাস যোজনা। আর এই যোজনা তে আবেদন করলেই আপনি ঘরে বসেই পেয়ে যেতে পারেন ১লক্ষ টাকা।
এটি হল অবিকল কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার মতোই একটি প্রকল্প। যার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন আমাদের রাজ্যের বহু মানুষ। আমাদের রাজ্যের এখনও পর্যন্ত এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছেন বা আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কম বা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অথবা রাজ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের মাথার উপর কোনো ছাদ নেই, অন্যের বাড়িতে ভাড়া করে থাকতে হয় আর এর কারণ হল তাদের আর্থিক অক্ষমতা। আর যাও বা তাদের মধ্যে কারো কারো নিজস্ব ঘর আছে সেগুলো দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাবহারের ফলে ভেঙে চুরে গিয়ে বাসস্থানের অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সমস্ত মানুষ আবার এই প্রকল্পের মাধ্যমে শান্তিতে ও সুরক্ষিত ভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন, এবং এখানে আবেদন করলে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে লক্ষাধিক টাকার উপরে পেয়ে যাবেন। এক কথায় বলা যায় তাদের একটি স্থায়ী ও সুরক্ষিত ঠিকানা তৈরি করে দেয়াই হল আমাদের রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগেই আমাদের রাজ্যের কয়েক লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তো এখন ও পর্যন্ত যারা এই প্রকল্পে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেননি আবেদন করেননি তারা শীঘ্রই আবেদন করে ফেলুন। পশ্চিমবঙ্গের তে কোন বাসিন্দা তা সে গ্ৰামের হোক বা শহরের সকলেই এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। রাজ্যের মোট ৫০লক্ষ নাগরিককে এই প্রকল্পের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। নতুন করে আবার এই প্রকল্পে আবেদন গ্রহণ চলছে।
মোট টাকার পরিমান: এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ১লক্ষ২০হাজার টাকা পাবেন রাজ্যবাসী। তবে এই টাকা তাদের কে একবারে দেয়া হবে না দেয়া হবে ৩ কিস্তিতে। ঘরের ভিতর তৈরি করা থেকে শুরু করে মাথার ছাদ তৈরি পর্যন্ত ৩ কিস্তিতে এই টাকা পাবেন তারা। এই টাকা হাতে হাতে দেওয়া হবে না আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এ সরাসরি এই টাকা পাঠানো হবে। তো চলুন এবারে দেখে নেয়া যাক এই প্রকল্পে আবেদন করতে হলে আপনাকে কি কি পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে-
বাংলা আবাস যোজনায় টাকা পাওয়ার নিয়মাবলী:-
১) আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২) তার পরিবারের বার্ষিক আয় দারিদ্র্য সীমার নিচে হতে হবে।
৩) এই প্রকল্পে কেবলমাত্র একবার ই আবেদন করা যাবে। অর্থাৎ কোনো নাগরিক যদি পূর্বে একবার আবেদন করে থাকেন তাহলে তিনি আর দ্বিতীয় বার আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। তবে এ কথা ও ঠিক যদি আবেদনে কোন রকম ভুল ভ্রান্তি থাকে তবে তা সংশোধন করে দ্বিতীয় বার আবেদন করা যাবে এবং তার গ্ৰাহ্য ও হবে।
৪) আবেদনকারীর নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যাক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট গ্ৰাহ্য হবে না।
এই যোজনায় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :-
১) রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমান হিসেবে ভোটার কার্ডের জেরক্স।
২) ভারতীয় নাগরিক ই আধার কার্ড এর জেরক্স।
৩) খাদ্যসাথী কার্ড/রেশন কার্ডের জেরক্স।
৪) কোনো জব কার্ড যদি থাকে তবে তার জেরক্স।
৫) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
৬) আপনি যেই পঞ্চায়েত এর বাসিন্দা সেই পঞ্চায়েত এর স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট।
এই যোজনায় আবেদনের পদ্ধতি:-
১) এই যোজনায় আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনি যেই পঞ্চায়েত এর স্থায়ী বাসিন্দা সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
২) তারপর সেখান থেকে বাংলা আবাস যোজনার ফর্ম নিয়ে সেটিকে ফিলাপ করতে হবে।
৩) তারপর সেই ফর্ম টিতে আপনার নিজের নাম, বাবার নাম, অভিভাবকের নাম, বয়স, ঠিকানা, আধার নম্বর, ভোটার কার্ডের নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখে ফর্ম টিকে ফিলাপ করতে হবে।
৪) ফর্মের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন- ভোটার কার্ডের জেরক্স, আধার কার্ডের জেরক্স, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রথম পাতার জেরক্স ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো সেলফ অ্যাটেস্টেড করে দিতে হবে।
সব শেষে এই সমস্ত জরুরী ডকুমেন্টস সহ ফিলাপ করা ফর্মটি একটি খামে ভরে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে জমা করতে হবে। তারপর গ্ৰাম পঞ্চায়েত এর আধিকারিকরা আপনার জমা করা ফর্মটি ভালো করে মিলিয়ে দেখে সব ঠিকঠাক থাকলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এবং যেখানে আপনি আপনার বাড়ি তৈরি করবেন বলে ঠিক করবেন সেই জায়গাটা পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিক মতো থাকলেই আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই প্রকল্পের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হবে। এবং তার দিয়ে একটি স্থায়ী ও সুরক্ষিত বাসস্থান বানিয়ে আপনি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।