32000 Primary Teacher Case:৩২,০০০ শিক্ষক বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে উত্তপ্ত সওয়াল, মামলার মোড় ঘোরালো আইনজীবীর যুক্তি



রাজ্য সরকার বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করেছেন এমনই প্রমাণ মিলেছে বারবার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এসএসসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন যার দরুন প্রায় 26 হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও নন টিচিং প্রার্থীর চাকরি চলে গিয়েছে। আবারো ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ মামলা ঝুলে রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলা নিয়ে আজ ফের কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হল। মামলার আপিলকারী পক্ষের তরফে প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ আদালতে একের পর এক যুক্তি উত্থাপন করেন, যা মামলার গতিপথ বদলে দিতে পারে বলেই আইনি মহলের মত। ৩২ হাজার চাকরি প্রার্থীর চাকরি সুনিশ্চিত হওয়ার অনেকটাই সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে আজকের শাওয়াল জবাবের পরে।

এই মামলার রায় নির্ভর করছে শুধুমাত্র ৩২,০০০ শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যতের ওপর নয়, বরং সমগ্র রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নীতিমালা এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রেও এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ফলে, এই মামলার প্রতি এখন গোটা রাজ্যের শিক্ষা মহল এবং চাকরিপ্রার্থীদের গভীর নজর রয়েছে।

 মামলার পটভূমি:

২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বড়সড় দুর্নীতি ও ত্রুটি রয়েছে। সেই কারণে ওই সব শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাটি রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারের রুটি-রুজির সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে ওঠে।

 আজকের ডিভিশন বেঞ্চের শুনানির মূল বিষয়বস্তু:

আজকের শুনানিতে অ্যাডভোকেট কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং যুক্তি আদালতের সামনে রাখেন:

১️⃣ Natural Justice লঙ্ঘন:

তিনি বলেন, "এই ৩২,০০০ জন শিক্ষককে আদালতের পক্ষ থেকে শোনার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। যাদের চাকরি চলে গেল, তারা মামলায় পক্ষও ছিল না। এটা ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।" তাঁর মতে, বিচার এভাবে একতরফা হতে পারে না।

২️⃣ আবেদনের সীমার বাইরে রায়:

মুল মামলার আবেদনকারীরা কেবলমাত্র কিছু পদ বাতিলের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিচারপতি সব ৩২,০০০ জনের চাকরি বাতিল করে দিয়েছেন। যা আইনত বৈধ নয় বলে দাবি করেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩️⃣ সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাব:

আইনজীবীর প্রশ্ন – “কোথায় CBI রিপোর্ট? কোথায় দুর্নীতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ?” — তিনি বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে এত বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

৪️⃣ বোর্ড দায়ী, চাকরিপ্রার্থী নয়:

নিয়োগ পরীক্ষায় যদি কোনও ত্রুটি থেকেও থাকে, তাহলে তার জন্য দায়ী নিয়োগকারী সংস্থা। চাকরিপ্রার্থীরা নয়। সুপ্রিম কোর্টের বহু রায়ের উদাহরণ টেনে তিনি এই যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।

 বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ:

ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি তব্রত চক্রবর্তী শুনানির সময় বলেন – "রাজনৈতিক মন্তব্য এড়িয়ে শুধুমাত্র আইনের দিক থেকে যুক্তি দিন"। এতে বোঝা যায়, আদালত অত্যন্ত নিরপেক্ষ এবং শুধু আইনি দিক বিচার করছে।

 শুনানির পরবর্তী দিন:

পরবর্তী শুনানি ১লা জুলাই নির্ধারিত হয়েছে। সেদিন প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁদের সওয়াল পেশ করবেন। তবে আজকের এই জোরালো সওয়ালের ফলে ৩২,০০০ চাকরিহারার মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

 মামলার ভবিষ্যৎ কী?

এই মামলার রায়ের ওপর নির্ভর করছে:

  • ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি ফেরানোর সম্ভাবনা

  • নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ

  • রাজ্যের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বৈধতা

  • শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা

 বিশ্লেষণ:

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলায় আদালত দুই দিকই ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে – (১) দুর্নীতির অভিযোগ সত্য কি না, (২) নিরীহ চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা। ফলে, আদালতের রায় যাই হোক না কেন, তা এক দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত হবে।



তারিখ
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
2023 সিঙ্গল বেঞ্চ ৩২,০০০ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়
2024 (ফেব্রুয়ারি) ডিভিশন বেঞ্চে মামলা গৃহীত হয়
2025 (জুন) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল শুরু
2025 (১লা জুলাই) পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারিত

 

৩২,০০০ শিক্ষক নিয়োগ বাতিল মামলায় আজকের শুনানি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র ও আইনি যুক্তিপূর্ণ সওয়াল বিচারপতিদের মনোযোগ কেড়েছে। তবে, আদালত এখনো কোনও চূড়ান্ত মন্তব্য করেনি। ফলে, আগামী ১লা জুলাইয়ের শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। গোটা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এই মামলার রায়।

Below Post Ad