আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের জন্য চলে এসেছেন নতুন করে বিশাল বড় সুখবর। আবারো নতুন করে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মহিলার মুখে হাসি ফোটাতে চলেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ (Lakshmir Bhandar) নিয়ে উঠে এল নতুন বড় খবর। সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের ভাতা খুব শীঘ্রই বাড়ানো হতে পারে। সামনেই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের এই নির্বাচনের মুখে রাজ্য সরকার রাজ্যবাসীদের খুশি করতে নতুন করে লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। বিশেষ করে আগামী জুলাই মাস থেকেই এই ভাতার অঙ্ক দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই নতুন আপডেটের সম্পূর্ণ বিস্তারিত।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বর্তমান সুবিধা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২১ সালে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেছিল। রাজ্যের গৃহবধূদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প চালু হয়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত মহিলারা লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে:
- সাধারণ শ্রেণির মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা ভাতা পান।
- তপশিলি জাতি (SC) ও তপশিলি উপজাতি (ST) শ্রেণির মহিলারা মাসে ১২০০ টাকা করে পান।
এই ভাতা সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। ফলে স্বচ্ছন্দে নিজেদের ছোটখাট খরচ সামলানোর সুযোগ পান উপভোক্তারা।
জুলাই থেকে বাড়তে চলেছে ভাতা?
তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ভাতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সরকারিভাবে এখনো ঘোষণা না হলেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, শীঘ্রই এই ঘোষণা আসতে পারে।
সম্ভাব্য নতুন ভাতার পরিমাণ:
| শ্রেণী | বর্তমান ভাতা | সম্ভাব্য নতুন ভাতা (জুলাই ২০২৫ থেকে) |
|---|---|---|
| সাধারণ (General) | ₹1000 | ₹1500 |
| তপশিলি জাতি/উপজাতি (SC/ST) | ₹1200 | ₹1800 |
এই ভাতা বৃদ্ধির ফলে লক্ষ লক্ষ মহিলার মাসিক আয় বাড়বে, যা তাঁদের আর্থিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
কেন বাড়ানো হচ্ছে ভাতা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মহিলাদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে সরকার তাই রাজ্যের মহিলাদের খুশি করতে নতুন করে উদ্যোগ নিতে চলেছেন রাজ্য সরকার। তাই এই ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া দেশের অন্যান্য রাজ্যের মহিলাদের জন্য চালু হওয়া নানা প্রকল্পের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়েও এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যান্য রাজ্যের মহিলারাও ২০০০ করে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের টাকার পরিমাণ অনেকটাই কম।
মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন?
সাম্প্রতিক এক সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,
“লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হল মহিলাদের সম্মান। এটা কোনও দয়া নয়। যতদিন আমি আছি, এই প্রকল্প চলবে।“
তবে মুখ্যমন্ত্রী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করেননি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন মহল থেকে স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যে জুলাই থেকে ভাতা বৃদ্ধির সুখবর আসতে চলেছে। ভাতা বৃদ্ধির ফলে রাজ্যের মহিলারা ভীষণভাবে উপকৃত হবেন।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- শুধুমাত্র রাজ্যের ২৫-৬০ বছর বয়সী মহিলারাই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেন। এছাড়াও ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে তারা বৃদ্ধ ভাতা রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
- সরকারি কর্মচারী বা করদাতা মহিলারা এই সুবিধা পান না।
- আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইনে বা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে করা যায়। এছাড়াও ভিডিও অফিসে বা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন জানাতে পারেন।
- আবেদন করার পর সরাসরি মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরিত হয়।
উপভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
ভাতা বাড়ানোর সম্ভাবনার খবরে খুশি রাজ্যের মহিলারা। একজন উপভোক্তা জানান,
“লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে ঘরের ছোটখাট খরচ মিটে যায়। ভাতা বাড়লে আরও সুবিধা হবে।“
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে মোট কত মহিলা উপকৃত?
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। ভাতা বাড়লে রাজ্যের অর্থনীতিতেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে এই টাকা দিতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগার প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক শিক্ষিত সমাজ অবশ্য এই প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও সাধারণ মানুষেরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
ভবিষ্যতে আর কী সুবিধা আসতে পারে?
সরকার সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর সঙ্গে স্বাস্থ্য বিমা, শিক্ষার সহায়তা ইত্যাদি সুবিধাও যুক্ত হতে পারে। যদিও এবিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।
উপসংহার
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের নারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আসন্ন ভাতা বৃদ্ধির ফলে এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজ্যবাসী। সরকারিভাবে ঘোষণা হলে সঠিক তারিখ ও শর্তাবলী জানানো হবে।
নজর রাখুন আমাদের পোর্টালে, ভবিষ্যতের সকল আপডেটের জন্য।