আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই হল খেটে খাওয়া মানুষ তাদের কোনো স্থায়ী রোজগার নেই। তারা হয় কোথাও দিন মজুরের কাজ করে অথবা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক বেতনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর বর্তমান যুগে জিনিস পত্রের যা আগুন দর তাতে করে সেই কাজ করে তারা যেটুকু টাকা উপার্জন করেন তা দিয়ে সংসার চালানো, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো এগুলোই ঠিকঠাক মতো সামলে উঠতে পারছেন না তার উপরে আবার ভবিষ্যতের জন্য টাকা সঞ্চয় করে রাখা, কোথায় পাবেন তারা এতো টাকা? তবে একথাও ঠিক যে প্রতিটি মানুষেরই সময় থাকতে তাদের নিজেদের ও পরিবারের মানুষজনেদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে রাখা উচিত। কিন্তু সব উচিত কাজই তো আর সব সময় করে ওঠা সম্ভব নয়। এতো দুর্মূল্যের বাজারে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পক্ষে সংসারের দায়-দায়িত্ব পালন করে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করে রাখা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু চিন্তার বিষয় যে একটা আছে সেটা তো আর অস্বীকার করা যায় না। কারন যতদিন পর্যন্ত তাদের বয়স কম আছে তারা শারীরিক ভাবে সক্ষম রয়েছেন ততদিন পর্যন্ত তারা খেটে রোজগার করে সংসার চালাতে পারবেন কিন্তু যখন তাদের বয়স বেড়ে যাবে তারা শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়বেন তখন কি হবে? তখন তাদের সংসার কিভাবে চলবে? এই সব বিষয়ে চিন্তা করেই ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের দেশের খেটে খাওয়া দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার স্বার্থে অটল পেনশন যোজনা বলে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছেন যার মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিটি দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়া মাত্রই প্রতি মাসে ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন দেওয়া হয়।
আর এবার সেই রকম ভাবে ভারতের বিখ্যাত জীবন বীমা কোম্পানি Life Insurance Corporation Of India(LIC) ও আমাদের দেশের অস্থায়ী পদে কর্মরত খেটে খাওয়া মানুষদের ভবিষ্যত জীবন সুরক্ষিত করার জন্য একটি নতুন পেনশন স্কিম চালু করেছে। যার নাম হল “জীবন অক্ষয় পলিসি”। LIC কোম্পানির তরফ থেকে চালু করা এই পেনশন স্কিমে এককালীন কিছু পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করলেই প্রতি মাসে ৩,০০০-২০,০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন পাবেন।
LIC এর “জীবন অক্ষয় পলিসি” স্কিমে আবেদন করার জন্য কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
LIC এর “জীবন অক্ষয় পলিসি” পেনশন স্কিমে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীর তেমন কোনো বাধ্যতামূলক যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে শর্ত শুধুমাত্র একটাই আর তা হল আবেদনকারীর বয়স ৩০-৮৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
“জীবন অক্ষয় পলিসি” পেনশন স্কিমের মাধ্যমে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
LIC কোম্পানির তরফ থেকে চালু করা এই নতুন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে যে যে সুবিধা পাওয়া যাবে তা হল-
১) এক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তি যদি ৩০ বছর বয়স হওয়া মাত্রই এককালীন ১ লক্ষ টাকার প্রিমিয়াম জমা দেন তাহলে তিনি তার পর থেকে প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
২) কোনো ব্যাক্তি যদি ৭৫ বছর বয়সের পর এই স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেন তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে এককালীন ৬ লক্ষ ১০ হাজার ৮০০ টাকার প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে তাহলে তিনি প্রতি মাসে ৬,০০৮ টাকা হিসেবে অর্ধ বার্ষিকীতে ৩৭ হাজার ৩৫ টাকা এবং বার্ষিক হিসেবে ৭৬ হাজার ৬৫০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
৩) আর কোনো ব্যাক্তি যদি মাসিক ২০,০০০ টাকা করে পেনশন পেতে চান তাহলে তাকে এককালীন ৪২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে।
কিভাবে আবেদন করতে হবে?
এক্ষেত্রে অনলাইন এবং অফলাইন দুই রকম ভাবেই আবেদন করা যাবে। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে LIC এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এবং অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে আপনাকে আপনার নিকটবর্তী কোনো LIC এজেন্সি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করে সেখান থেকেই আবেদন করতে হবে।
আবেদন করার সময় কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
“জীবন অক্ষয় পলিসি” পেনশন স্কিমে আবেদন করার সময় যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) আধার কার্ডের জেরক্স।
২) ভোটার কার্ডের জেরক্স।
৩) রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
কত তারিখ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে?
এই পেনশন স্কিমের আবেদন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং কোনো রুপ শেষ সময় সীমা ধার্য্য করা হয়নি। আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী যেদিন খুশি আবেদন করতে পারবেন। তবে শুভ কাজ তাড়াতাড়ি করে ফেলাই ভালো। তাই বেশি দেরি না করে চটপট আবেদন করে ফেলুন। আর নিজের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করুন।