WB Smart Meter Latest Update 2025: রাজ্যজুড়ে স্মার্ট মিটার বিতর্কে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার

দীর্ঘদিন ধরে চলা পশ্চিমবঙ্গে স্মার্ট মিটার নিয়ে বিতর্ক ও অভিযোগের অবসান ঘটাল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অবশেষে বিদ্যুৎ দফতর রাজ্যের সমস্ত স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিল। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একাংশের অসন্তোষ, অস্বাভাবিক বিলিং অভিযোগ, এবং ভুতুড়ে বিল সংক্রান্ত ভয়াবহ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই বড় সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে রাজ্য প্রশাসন।

মূল সিদ্ধান্তগুলি সংক্ষেপে:

  • স্মার্ট মিটার স্থাপনে আপাতত স্থগিতাদেশ।
  • পুরনো অ্যানালগ মিটার চালু থাকবে।
  • বিদ্যুৎ বিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে তদন্ত বাধ্যতামূলক।
  • গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়া জোর করে স্মার্ট মিটার বসানো যাবে না।
  • নির্দিষ্ট টোল ফ্রি নম্বর ও হেল্পলাইন চালু করা হচ্ছে অভিযোগের জন্য।

 স্মার্ট মিটারের প্রেক্ষাপট: কোথা থেকে শুরু এই বিতর্ক?

গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ সামনে আসছিল। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, স্মার্ট মিটার বসানোর পর তাদের বিদ্যুৎ বিল হঠাৎ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য এই অস্বাভাবিক বিল ছিল এক বিরাট সমস্যা।

এর পাশাপাশি, অনেকেই বলেন যে তাদের অনুমতি ছাড়াই ঘরে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠন এই নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়। এমনকি, সোশ্যাল মিডিয়াতেও #StopSmartMeter ট্রেন্ড করে।

মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা: “মানুষের স্বার্থই আমাদের সবার আগে”

রাজ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মুখ খুলে বলেন—

“মানুষের স্বার্থ আমাদের কাছে সবার উপরে। স্মার্ট মিটার ইস্যুতে কোনো ধরনের জবরদস্তি করা যাবে না। কেউ চাইলে পুরনো মিটারই ব্যবহার করবেন। বিদ্যুৎ বিল নিয়মিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে। ভুল বিল হলে সংশোধন হবে।”

এই ঘোষণার পর রাজ্যবাসীর মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে।

রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের জারি করা নতুন নির্দেশাবলী

বিষয় নির্দেশ
📍 স্মার্ট মিটার বসানো গ্রাহকের লিখিত অনুমতি ছাড়া বসানো যাবে না
📍 বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক হলে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত বাধ্যতামূলক
📍 পুরনো মিটার স্বেচ্ছায় কেউ চাইলে পুরনো মিটারই ব্যবহার করতে পারবেন
📍 অভিযোগ জানানোর নম্বর 1800-345-5222 (টোল ফ্রি হেল্পলাইন)
📍 স্মার্ট মিটার স্থগিতাদেশ রাজ্যের সব অঞ্চলে আপাতত নতুন স্মার্ট মিটার স্থাপন বন্ধ

গ্রাহকদের সুবিধা ও সম্ভাব্য পরিবর্তন

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা উপকৃত হবেন। বিশেষ করে, যাঁরা স্মার্ট মিটার নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন তাঁদের জন্য এ এক স্বস্তির বার্তা।

সম্ভাব্য সুবিধা:

  • পুরনো বিলিং পদ্ধতিতে ফিরতে পারবেন ইচ্ছুক গ্রাহকরা।
  • অতিরিক্ত বা ভুতুড়ে বিল এলে অবিলম্বে সমাধান।
  • জোর করে নতুন মিটার বসানোর অভিযোগের অবসান।
  • গ্রাহকদের জন্য ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন চালু।
  • গ্রাহকের অভিযোগ সরকারি নজরে আসবে দ্রুত।

কেন এতো বিতর্ক? স্মার্ট মিটারের প্রধান সমস্যা কী ছিল?

স্মার্ট মিটার নিয়ে মূলত যেসব অভিযোগ উঠেছিল:

  1. 📈 বিল অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া: কিছু ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি বিল এসেছে।
  2. ভুল রিডিং: সঠিক ইউনিট দেখাচ্ছে না মিটার।
  3. 🚫 জোর করে বসানো: গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই মিটার বদল।
  4. 📱 অ্যাপ সমস্যা: স্মার্ট মিটারের অ্যাপ কাজে দিচ্ছে না, রিডিং দেখা যাচ্ছে না।
  5. 💸 রিচার্জ বাধ্যবাধকতা: প্রিপেইড স্মার্ট মিটার রিচার্জ না করলে বিদ্যুৎ কাটা যাচ্ছিল।

স্মার্ট মিটার না অ্যানালগ — কোনটা ভাল?

দিক স্মার্ট মিটার অ্যানালগ মিটার
✅ সুবিধা রিয়েল টাইম ইউনিট দেখা, স্মার্ট কন্ট্রোল সহজ ব্যবহার, কম জটিলতা
❌ অসুবিধা অতিরিক্ত বিলের আশঙ্কা, অ্যাপ নির্ভরতা পুরনো প্রযুক্তি, রিমোট বন্ধ সম্ভব নয়
⚠️ গ্রাহক অনুমতি প্রয়োজনীয় নয়

রাজ্যবাসীর প্রতিক্রিয়া কী?

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ, গ্রাহক ফোরাম, ও বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। অনেকেই বলছেন, “মানুষের বক্তব্য সরকার শুনেছে — এটা আশার দিক।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় “Thank You Didi” হ্যাশট্যাগও ট্রেন্ড করছে।

অভিযোগ জানানোর জন্য হেল্পলাইন নম্বর

হেল্পলাইন নম্বর
WBSEDCL অভিযোগ 1800-345-5222 (টোল ফ্রি)
CESC অভিযোগ 1912 / 033-35011912

কী কী জেনে রাখা জরুরি?

  1. স্মার্ট মিটার বসানো বাধ্যতামূলক নয়।
  2. পুরনো মিটার চালিয়ে যেতে পারবেন।
  3. নতুন মিটার বসানোর আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
  4. ভুল বিল পেলে ৭ দিনের মধ্যে সমাধান বাধ্যতামূলক।
  5. টোল ফ্রি নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

Q1. স্মার্ট মিটার কি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল সরকার?
❌ না, চাইলে কেউ স্মার্ট মিটার নিতে পারবেন। জোর করে বসানো যাবে না।

Q2. পুরনো মিটার চালিয়ে যাওয়া যাবে?
✅ হ্যাঁ, একদম যাবে।

Q3. ভুল বিল হলে কী করব?
📞 টোল ফ্রি নম্বরে অভিযোগ জানাবেন। ৭ দিনের মধ্যে সমাধান হবে।

Q4. নতুন স্মার্ট মিটার বসানোর আগে কী করতে হবে?
✍️ গ্রাহকের লিখিত সম্মতি নিতে হবে।

 উপসংহার

স্মার্ট মিটার নিয়ে রাজ্য সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছেন। বিদ্যুৎ দফতরের এই নতুন নির্দেশিকাগুলি বাস্তবে কার্যকর হলে গ্রাহকদের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। যারা স্মার্ট মিটার চান না, তারা পুরনো মিটারেই থেকে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে, যারা আধুনিক প্রযুক্তি চান, তাদের জন্য স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা চালু থাকছে। সব মিলিয়ে সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দিকেই এগোল এই সিদ্ধান্ত।

Leave a Comment